BANNER

ডেঙ্গু হলে সময়ক্ষেপণ নয়

 অধ্যাপক প্রণব কুমার চৌধুরী সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ।

  সংগৃহিতঃ প্রথম আলো: ১১ জুন ২০২৩ 

ডেঙ্গু মশা

 


ডেঙ্গু জ্বরে বেশির ভাগ আক্রান্ত হয় ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে এবং বস্তি এলাকায় ডেঙ্গু সংক্রমণের উচ্চহার দেখা যায়। এই ভাইরাসের চারটি ধরন শনাক্ত হয়েছে। একাধিক ধরনে বা দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে রোগের তীব্রতা অনেক বেশি থাকে। বর্তমানে অনেক শিশু দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে বলে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক শিশুকে আবার ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে জটিল অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।

শুরুতেই শনাক্ত জরুরি

ডেঙ্গু ভাইরাস শরীরে সংক্রমণের সাধারণত ৪ থেকে ৭ দিনের মধ্যে সাধারণ উপসর্গগুলো দেখা দেয়। প্রথম ১ থেকে ৫ দিনÑহঠাৎ উচ্চমাত্রার জ্বর (প্রায় ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট), বমি ভাব, বমি, শরীরে র‌্যাশ (উপসর্গের প্রথম বা দ্বিতীয় দিনে ত্বকে লাল ফুসকুড়ি বা ৪ থেকে ৭ দিনের মধ্যে হামের মতো লাল বিন্দু), হাড়ের জোড়ায় ও মাংসপেশিতে প্রবল ব্যথা ইত্যাদি হচ্ছে ডেঙ্গু 

জ্বরের উপসর্গ।

এর সঙ্গে কিছু লক্ষণ ডেঙ্গু জ্বরের ‘বিপজ্জনক চিহ্ন’ হিসেবে স্বীকৃত। যেমন পেটব্যথা, অনবরত বমি, শরীরে পানি জমা, নাক-মাড়ি থেকে রক্তপাত, অতিরিক্ত দুর্বলতা, অস্থিরতা, ২ সেন্টিমিটারের বেশি লিভারস্ফীতি, রক্তে হিমাটোক্রিটের মান বৃদ্ধি এবং অণুচক্রিকা দ্রুত কমতে থাকা।

ডেঙ্গু জ্বরের ৫ থেকে ৭ দিন সময়কালে ‘মারাত্মক’ চিহ্নগুলো দেখা দিতে পারে। যেমন ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (যা ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়), শরীরে পানি জমা, নাড়ি দুর্বল, শরীর শীতল হওয়া, রক্তচাপ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়া, অতিরিক্ত রক্তপাত, লিভারের এনজাইম এএসটি বা এএলটির মান ১ হাজার বা এর বেশি হওয়া, অচৈতন্য অবস্থা, হৃৎপিণ্ড ও অন্যান্য অঙ্গে রোগের লক্ষণ ইত্যাদি।

যেসব সতর্কতা দরকার 

শিশুর জ্বর হওয়ার প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ‘মৌসুমি জ্বর’ ভেবে সময়ক্ষেপণ করা যাবে না। এরই মধ্যে ডেঙ্গুর ‘বিপজ্জনক চিহ্ন’ বা ‘মারাত্মক’ চিহ্নগুলো প্রকাশ পায়। ফলে শিশু সংকটজনক পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। এই মৌসুমে চিকিৎসকের সন্দেহ হলে প্রথম বা দ্বিতীয় দিনেই ডেঙ্গু এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করে ডেঙ্গু শনাক্ত করতে পারবেন।

জ্বর সম্পূর্ণ নেমে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর যদি রোগী বেশি অসুস্থতা অনুভব করে, তবে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা জরুরি। প্রয়োজনে রক্ত বা প্লাজমা সঞ্চালন এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের বিশেষ চিকিৎসা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, জ্বর নেমে যাওয়ার পরই আসলে জটিলতা শুরু হয়।

যথাযথ চিকিৎসাসেবা পেলে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুহার মাত্র ১ শতাংশ। কিন্তু শক দেখা দিলে তা বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত 

হতে পারে। একসঙ্গে একাধিক অঙ্গের বিকলাবস্থা (পিএমআইসি), চিকিৎসাকালীন ওভারহাইড্রেশন এবং ডায়াবেটিস ও অ্যাজমার মতো দীর্ঘমেয়াদি অসুখে ভোগা শিশুর জন্য ডেঙ্গু বেশি প্রাণঘাতী।

এখনো বৈশ্বিকভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায় ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী মশার কামড় থেকে বাঁচার নানা ব্যবস্থা নেওয়া। যেমন শিশুকে ফুল শার্ট, ফুল প্যান্ট ও মোজা পরানো। দিনের বেলায়ও মশারি টানিয়ে ঘুমানো।


No comments

Theme images by compassandcamera. Powered by Blogger.