BANNER

জ্বরে শিশুর খিঁচুনি কতটা ভয়ের

ডা. হুমায়রা রফিকা কাদেরী, সহযোগী অধ্যাপক, নবজাতক, শিশু ও কিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউট, ঢাকা


শিশুদের জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার নানা কারণ আছে। কিছু শিশুর ক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা বাড়লে খিঁচুনি শুরু হয়। জেনে নেওয়া যাক, জ্বরে খিঁচুনি কেন হয়, হলে কী করবেন।

সাধারণত ৩ মাস থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের জ্বরের প্রথম দিন এই খিঁচুনি হতে পারে। টিকা দেওয়ার পর জ্বর হলেও এই খিঁচুনির সম্ভাবনা আছে। পরিবারের বাবা-মা, ভাই-বোন অথবা নিকটাত্মীয় কারও জ্বরজনিত খিঁচুনির ইতিহাস থাকলে এই সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। শিশুর প্রথমবার জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলে পরে প্রতিবার জ্বর এলে খিঁচুনির ঝুঁকি থাকে।

লক্ষণ কী

হঠাৎ করে শিশুর হাত-পা বাঁকা হয়ে যেতে পারে, শিশু চোখ উল্টে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে পারে, দাঁতে দাঁত লেগে যেতে পারে, মুখ থেকে ফেনা আসতে পারে। সাধারণত জ্বর খিঁচুনিতে একবারই খিঁচুনি হয়। এই খিঁচুনি কয়েক মিনিট স্থায়ী হতে পারে। খিঁচুনির পর শিশু আবার স্বাভাবিক হয়ে যায় অথবা ঘুমিয়ে যেতে পারে। শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ এতে ব্যাহত হয় না।

করণীয় কী

আতঙ্কিত না হয়ে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।

শিশুকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে। আঁটসাঁট পোশাক থাকলে খুলে দিতে হবে।

একপাশে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে। দাঁতের ফাঁকে চামচ বা অন্য কিছু দেওয়া যাবে না।

মুখে খাবার, পানি বা ওষুধ দেওয়া যাবে না।

দ্রুত জ্বর কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্যারাসিটামল ও সাপোজিটরি দেওয়া যায়।

কুসুম গরম পানি দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। বেশি জ্বর হলে মাথায় পানি দিতে হবে।

কখন হাসপাতালে ভর্তি করবেন

খিঁচুনি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলে অথবা একই দিনে বারবার হলে অথবা শিশুর প্রথম জ্বরজনিত খিঁচুনি হলে অতিদ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নিতে হবে। এ ছাড়া শিশু অজ্ঞান হয়ে গেলে, ছয় বছর বয়সের পরও খিঁচুনি না কমলে এবং খিঁচুনির পর শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

প্রতিকার কী

যেসব শিশুর জ্বরজনিত খিঁচুনির ইতিহাস আছে, তাদের ক্ষেত্রে জ্বর হলেই দ্রুত তাপমাত্রা কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। শরীর স্পঞ্জ করার পাশাপাশি প্যারাসিটামল সিরাপ বয়স এবং ওজন অনুযায়ী দিনে তিন থেকে চারবার খাওয়াতে হবে। জ্বরের প্রথম তিন দিন ডায়াজিপামজাতীয় ওষুধ ০.৩ থেকে ০.৫ মিলিগ্রাম/কেজি হিসাব করে দিনে তিনবার দিতে হবে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, এতে জ্বরজনিত খিঁচুনির প্রভাব ৮০ শতাংশ কমে আসে। মনে রাখবেন, শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলে জ্বরজনিত খিঁচুনি এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে শিশুর কোনো স্বাস্থ্য সমস্যাও হয় না। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

No comments

Theme images by compassandcamera. Powered by Blogger.