BANNER

অল্পতেই রেগে যান? এই ৯ উপায় অনুসরণ করে দেখতে পারেন

 ডা. মো. রশিদুল হক: সহকারী অধ্যাপক, মানসিক রোগ বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ

সংগৃহিতঃ প্রথম আলো  : ২৪ জুন ২০২৩ 



রাগ মানুষের একটি সহজাত আবেগ

মানুষের সহজাত কিছু আবেগ থাকে। যেমন হাসি, কান্না, ঘৃণা, ভালোবাসা, ঈর্ষা, বিরক্তবোধ ইত্যাদি। তেমনই রাগ একটি সহজাত আবেগ। সবার মধ্যেই কমবেশি রাগ আছে। তবে কখনো কখনো কেউ কেউ মাত্রাতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত রেগে যান, যা থেকে তর্কাতর্কি, গালিগালাজ, ভাঙচুর এমনকি হাতাহাতি পর্যন্ত হয়। অনিয়ন্ত্রিত রাগ একদিকে যেমন আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে, তেমনই অন্য দিকে মানুষের মধ্যে জিঘাংসা তৈরি করে, যা তাকে প্রতিহিংসাপরায়ণ করে তোলে। সংঘাত ও খুনখারাবির ঝুঁকি বাড়ায়। 

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাগ নেতিবাচক ফল বয়ে আনে। অনিয়ন্ত্রিত বা মাত্রাতিরিক্ত রাগ শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক বা পারস্পরিক সম্পর্কে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। কর্মক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। রাগ থেকে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে গেলে হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো মারাত্মক মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হতে পারে। 

রাগ আবার ইতিবাচকও হতে পারে, যদি তা সুন্দরভাবে দৃঢ়তার সঙ্গে ও সম্মানজনকভাবে প্রকাশ করা যায়। কখনো কখনো রাগ একজন মানুষকে তাঁর লক্ষ্য অর্জনে বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রভাবিত করে। 

কেন রাগ হয়?

সহজাত আবেগ হলেও বিভিন্ন কারণে রাগ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। অতীতের কোনো কষ্টদায়ক স্মৃতি বা ঘটনা রাগ বাড়িয়ে দিতে পারে। 

কোনো কোনো সমাজে পারিবারিক, সামাজিক মূল্যবোধ, রীতি, সংস্কৃতিতে রাগকে স্বাভাবিক আবেগ মনে করে। 

জিনগত কারণে কেউ কেউ চাপে পড়লেই মাত্রাতিরিক্ত রাগ, প্রতিহিংসা প্রকাশ করে। 

অনেক ধরনের ব্যক্তিত্বের ধরন যেমন অ্যান্টিসোশ্যাল পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার, বর্ডার লাইন পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার, অ্যাংশাস পারসোনালিটি ডিজঅর্ডারে অকারণেই অতিরিক্ত রাগ হয়ে থাকে। 

কিছু মানসিক রোগের কারণেও আমাদের রাগ অনিয়ন্ত্রিত ও মাত্রাতিরিক্ত হতে পারে। যেমন অপজিশনাল ডেভিয়েন্ট ডিজঅর্ডার, কনডাক্ট ডিজঅর্ডার, অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার, অ্যাজিটেটেড ডিপ্রেশন, পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার, সাইকোসিস ইত্যাদি। 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

রাগ নিয়ন্ত্রণ তাই একটি প্রক্রিয়া, যা ধারাবাহিক অনুশীলনের মাধ্যমে আয়ত্তে আনতে হবে—

১. কারও প্রতি হঠাৎ রেগে গেলে তার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে সাময়িকভাবে ওই স্থান পরিবর্তন করুন। পছন্দের কোনো কাজ করুন। 

২. মনোযোগ পরিবর্তন করতে ১০০ থেকে উল্টো দিকে গুনতে থাকুন। বড় বড় শ্বাস নিন, যাতে মনোযোগ অন্য দিকে যায়। এতে আপনার রাগ কমে যাবে। 

৩. নিজের সঙ্গে কথা বলুন। রাগ হলে নিজেকে প্রশ্ন করুন রাগের কারণ কী ছিল? রাগের সময় আপনার আচরণ কেমন ছিল? রাগের ফলাফল কী? অনেক সময় আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন রাগের কারণ বা আপনার আচরণ ও ফলাফল সবই অগ্রহণযোগ্য। আপনি তখন যুক্তিযুক্ত আচরণ করতে পারবেন। 

৪. নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম আপনার শরীর ও মনকে স্থির ও প্রশান্ত করবে। অনেক ধরনের শিথিলায়ন পদ্ধতি আছে। যেমন শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম, হাঁটা, সাইক্লিং, সাঁতার, ধ্যান, যোগব্যায়াম ইত্যাদি। 

৫. ধূমপান, মাত্রাতিরিক্ত চা-কফি পান, মদ ও অন্যান্য নেশাজাতীয় বস্তু অনিয়ন্ত্রিত রাগের অন্যতম কারণ। তাই এসব বদঅভ্যাস পরিহার করলে রাগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। 

৬. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং ঘুম থেকে উঠুন। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাবেন। ঘুম আমাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে রাগ কমিয়ে দেয়। রাতে না ঘুমিয়ে দিনে ঘুমালে আমাদের শরীরের দেহঘড়ি এলোমেলো হয়ে যায়, ফলে ব্যাহত হয় অনেক হরমোন ও নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরণ, যা আমাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত করে। 

৭. মানসিক চাপ ধৈর্য কমিয়ে দেয়, ফলে রাগ বেড়ে যায়। কোনো সমস্যার সমাধান না হলেও মানসিক চাপ বাড়ে। তাই কোনো সমস্যার সমাধান না হলে শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে আলোচনা করে সহজতম উপায়টি প্রয়োগ করুন। এতে মানসিক চাপ কমে যাবে, রাগও কমে যাবে। 

৮. কারও ওপর রাগ পুষে রাখবেন না। কারও ওপর রাগ থাকলে শান্ত ও স্থির অবস্থায় তা প্রকাশ করুন। আপনার খারাপ লাগার জায়গাটাও বলুন। এতে আপনার রাগ কমে যাবে। 

৯. দীর্ঘমেয়াদি অনিয়ন্ত্রিত রাগ ব্যক্তি, পারিবারিক ও কর্মজীবনে অনিষ্ট করে। রাগ নিয়ন্ত্রণে অনেক সময় আমাদের পেশাদার সাহায্যের প্রয়োজন হয়। ‘অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং’ অনেকের রাগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং অত্যাবশ্যকীয় ভূমিকা পালন করে। 

রাগকে দূর করা সম্ভব নয়, তবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে জীবন সফলভাবে পরিচালিত করা সম্ভব। আসুন, রাগকে জয় করে জীবনকে উপভোগ করি। 

No comments

Theme images by compassandcamera. Powered by Blogger.