BANNER

বন্ধ্যত্ব কোনো অভিশাপ নয়

ডা. নাজিয়া সুলতানা, সিনিয়র কনসালট্যান্ট (অবস অ্যান্ড গাইনি), ইমপালস হাসপাতাল, তেজগাঁও, ঢাকা

সংগৃহিতঃ প্রথম আলো: ৪ জুলাই ২০২৩



কোনো দম্পতি যদি কোনো ধরনের জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতি ছাড়া এক বছর একসঙ্গে বসবাস ও নিয়মিত সহবাসের পরও সন্তান ধারণে ব্যর্থ হন, তবে তাকে বন্ধ্যত্ব বা ইনফার্টিলিটি বলা হয়ে থাকে। বন্ধ্যত্ব মূলত দুই ধরনের। ১. প্রাথমিক (প্রাইমারি), অর্থাৎ যাঁরা কখনো সন্তান গর্ভে ধারণ করেননি। ২. মাধ্যমিক (সেকেন্ডারি), যাঁদের আগে গর্ভধারণ হয়েছে, কিন্তু পরে আর গর্ভধারণ 

হচ্ছে না।

৮০ ভাগ দম্পতি সাধারণত চেষ্টার প্রথম বছরে গর্ভধারণে সমর্থ হন। ১০ ভাগ দ্বিতীয় বছরে কাঙ্ক্ষিত ফল পান। বাকি ১০ ভাগের জন্য মূলত চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, বন্ধ্যত্বের কারণ বা দায় বর্তায় ৪০ ভাগ ক্ষেত্রে নারীর ওপর, ৪০ ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষের ওপর, বাকি ২০ ভাগ ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই দায়ী থাকেন।

বন্ধ্যত্ব কোনো দুর্ভাগ্য বা অভিশাপ নয়। এটি একটি স্বাস্থ্যগত বিষয়। সঠিক সময়ে সঠিক কারণ নির্ণয়ের মাধ্যমে উপযুক্ত চিকিৎসায় এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

নারীর বন্ধ্যত্বের কারণ

পিসিও বা পলিসিস্টিক ওভারি: প্রতি মাসে নারীর ওভারি থেকে যে ডিম্বাণু নিসৃত হওয়ার কথা, তা বাধাপ্রাপ্ত হয়।

হরমোনের কারণ: যেমন থাইরয়েডের সমস্যা, প্রোল্যাকটিন হরমোনের আধিক্য, ডিম্বাণুর সংখ্যা কমে যাওয়া বা লো এএমএইচ বা লো ওভারিয়ান রিজার্ভ।

বয়স, স্ট্রেস, খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশগত প্রভাব, ক্যানসারসহ নানা কারণে ডিম্বাণুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যেতে পারে।

কিছু বিশেষ রোগ যেমন এন্ডোমেট্রিওসিস ও চকলেট সিস্ট। কিছু যৌনবাহিত রোগের কারণেও নারীর প্রজনন অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে।

জন্মগত ত্রুটি: জন্মগতভাবে জরায়ু না থাকা, জরায়ু অপরিপক্ক থাকা, জন্মগতভাবে ডিম্বাণু না থাকা বা কম থাকা, ডিম্বাশয় ছোট থাকা ইত্যাদি।

পুরুষের বন্ধ্যত্বের প্রধান কারণ

বীর্যের সংখ্যাগত বা গুণগত সমস্যা: যেমন এজোস্পার্মিয়া বা শুক্রাণুর অনুপস্থিতি। হতে পারে শুক্রাণু উৎপাদনই হচ্ছে না অথবা শুক্রাণু আসার পথে কোথাও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ওলিগোস্পার্মিয়া মানে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাওয়া।

এ ছাড়া শুক্রাণুর চলনক্ষমতায় সমস্যা ও ত্রুটিযুক্ত শুক্রাণু অধিক থাকা।

পুরুষের প্রধান হরমোন যেমন টেস্টোস্টেরন হরমোন সঠিক মাত্রায় না থাকা বা কম বা বেশি থাকা।

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ধূমপান, নেশাদ্রব্য ব্যবহার, ছোটবেলায় মাম্পস অথবা হাম থেকে শুক্রাশয়ে সমস্যা দেখা দেওয়া, প্রজনন অঙ্গে কোনো আঘাত বা অস্ত্রোপচার, যৌনবাহিত অসুখ বা যক্ষ্মার কারণেও বন্ধ্যত্ব হতে পারে।

প্রতিকার

নারী ও পুরুষ উভয়েরই সাধারণভাবে কিছু ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার জন্য খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। শর্করা কমিয়ে প্রোটিন ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। শাক-সবজি ও ফলমূল বেশি খেতে হবে।

ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিতে হবে।

পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। রাত না জাগা ও সকালে আগে ওঠার অভ্যাস করতে হবে।

সময়মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।r

No comments

Theme images by compassandcamera. Powered by Blogger.