BANNER

প্রস্রাবে কেন দুর্গন্ধ


 

 ডা. শাহনূর শারমিন, সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ

সংগৃহিতঃ প্রথম আলো  : ১১ জুন ২০২৩ 

আমাদের শরীরের বর্জ্যপদার্থের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। প্রস্রাবের প্রায় ৯৫ শতাংশই পানি, সঙ্গে আছে ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি। স্বাভাবিক অবস্থায় প্রস্রাবের রং হয় হালকা হলদেটে। সঙ্গে হালকা ঝাঁজালো গন্ধ থাকে, যার কারণ মূলত বাতাসের সংস্পর্শে আসার পর অক্সিডেটিভ ক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন অ্যামোনিয়া যৌগ। তাই দেখা যায়, প্রস্রাবের গন্ধ তাৎক্ষণিকভাবে কম থাকলেও সঙ্গে সঙ্গে ফ্লাশ না করলে ধীরে ধীরে তীব্র হতে থাকে।

 হালকা হলুদ বর্ণের খানিকটা অ্যামোনিয়ার গন্ধবিশিষ্ট প্রস্রাব স্বাভাবিক। তবে অনেকে কখনো কখনো তীব্র গন্ধযুক্ত প্রস্রাবের সমস্যায় পড়তে পারেন।

শারীরিক নানা কারণে প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হতে পারে। স্বাভাবিক অবস্থায় কেউ যদি পানি বা তরল কম খান, তাহলে শরীর পানিশূন্য হয়ে প্রস্রাব বেশি ঘন হয়ে গেলে গন্ধ হতে পারে তীব্র। তীব্র গন্ধযুক্ত প্রস্রাবের আরেকটি প্রচলিত কারণ হচ্ছে মূত্রনালির সংক্রমণ। যাকে ‘ইউরিন ইনফেকশন’ বলা হয়। জীবাণুঘটিত কারণে মূত্রনালির সংক্রমণে প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হতে পারে। সঙ্গে থাকতে পারে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া, বারবার প্রস্রাবের বেগ ইত্যাদি। মহিলাদের ক্ষেত্রে জরায়ুমুখের প্রদাহের কারণেও এ রকম সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া জননতন্ত্রের সংক্রমণে প্রস্রাবের দুর্গন্ধ নিয়ে রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

রক্তের সুগার বেড়ে গেলে অর্থাৎ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে প্রস্রাবে অন্য রকম গন্ধের কথা বলেন অনেক রোগী। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে মূত্রনালির সংক্রমণের হারও বেশি।

কখনো কখনো কিছু খাদ্যাভ্যাসের কারণে প্রস্রাবে গন্ধ হতে পারে। পেঁয়াজ, রসুন, শতমূলী ইত্যাদি খাবার খেলে প্রস্রাব অতিরিক্ত গন্ধযুক্ত হতে পারে। যাঁরা চা, কফি ইত্যাদি ক্যাফেইনজাতীয় পানীয় বেশি খান, তাঁদের ক্ষেত্রেও এ রকম সমস্যা হতে পারে। কিছু কিছু ওষুধ আছে, যা খেলে প্রস্রাবে বিদঘুটে গন্ধ হতে পারে। যেমন ভিটামিন বি–জাতীয় ওষুধ, কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদি।

প্রস্রাবে অতিরিক্ত গন্ধ মনে হলে প্রথমেই পর্যাপ্ত পানীয় পান করে পানিশূন্যতা কমানোর চেষ্টা করা উচিত। আর যদি জ্বালাপোড়া বা জননতন্ত্রের সমস্যা থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। রক্তে সুগার বেড়ে থাকলে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে। খাদ্যাভ্যাস বা কোনো ওষুধের কারণে হলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। মনে রাখতে হবে, প্রস্রাবে সাময়িকভাবে গন্ধ বেশি হতে পারে, কিন্তু তা যদি বেশি সময় ধরে থাকে বা অসহনীয় দুর্গন্ধ হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।


No comments

Theme images by compassandcamera. Powered by Blogger.